29 August 2018 News
একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কের দাবি ধৃত প্রদীপ চৌহানের, শিক্ষক খুনের পুনর্নিমানে দুটি হোটেলে নিয়ে গেল পুলিশ
দুর্গাপুর: বাড়িতে মাঝেমাঝেই আসত অপরিচিত এক যুবক। সেদিন মেয়েকে বাড়ির মধ্যে ওই যুবকের সঙ্গে ধরে ফেলেছিলেন। প্রতিবাদ করতে প্রাণ খোয়াতে হয়েছে। মেয়ের সামনেই এলোপাথাড়ি ছুরি চালিয়ে খুন করা হয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষক তপন মুখার্জিকে। এই ঘটনা দিন চারেক আগের। এবার একে একে সামনে আসছে নেপথ্যের কাহিনী। সাংবাদিকদের জেরায় অভিযুক্ত যুবক, প্রদীপ চৌহান মেনে নেয় যে, সেক্স করার জন্যই তাকে বাড়িতে ডাকত শিবানী।
রবিবার অর্থাৎ ২৬ অগাস্ট নিজের বাড়িতেই খুন হয়েছিলেন তপন মুখার্জি। সেই খুনের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা প্রদীপকে। তার সঙ্গে তপন মুখার্জির মেয়ের সম্পর্কের কথা আগেই উঠে এসেছিল। এবার সেই প্রসঙ্গে পুলিশকে আরও অনেক কথা জানাল প্রদীপ। খুনের দিন ক্যামেরার সামনে শিবানীকে না চেনার ভান করলেও গতকাল জানিয়েছে, শিবানীর সঙ্গে দেড় বছর ধরে সম্পর্ক ছিল তার। পাশাপাশি এও জানায়, ওই বাড়িতে যাতায়াত তার নতুন নয়। আগেও গেছে এবং ধরা পড়েছে শিবানীর মা সুনন্দার কাছে। একথা অবশ্য শিবানীর পাশাপাশি লুকিয়ে গেছিলেন সুনন্দাও।
জেরায় প্রদীপ জানিয়েছে, মাঝেমাঝেই দুর্গাপুরে আসত সে। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে প্যারাডাইস নামের একটি হোটেলে উঠত। অনেকবার তারা একসঙ্গে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে ঘুরতে গেছিল। শিবানীর মা পেশায় নার্স। তাঁর নাইট ডিউটি থাকলে তখন প্রদীপকে বাড়িতে ডাকত শিবানী। এবারও সেই ছকেই চলছিল সবকিছু। দুর্গাপুরে এসে উঠেছিল প্যারাডাইস হোটেলে। মায়ের নাইট ডিউটি থাকায় রবিবার রাতে প্রদীপকে বাড়িতে ডেকেছিল শিবানী। গত দেড় বছরে এরকম অনেকবার হয়েছে। শিবানীর বাড়িতেই তাদের মধ্যে ৪-৫ বার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রদীপ। একথা বলার পর সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন করেন, তবে কি সেক্স করার জন্যই প্রদীপকে বাড়িতে ডাকত শিবানী? প্রদীপ তাতে সম্মতি জানায়।
তবে প্রদীপের বক্তব্য অনুযায়ী, খুনের দিন তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখেননি তপনবাবু। যখন দু’জনে হাতেনাতে ধরা পড়ে তখন তারা বসেছিল। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, প্রদীপের সঙ্গে মেয়েকে দেখে প্রতিবাদ জানান তপন মুখার্জি। তারপর দু’জনের ধস্তাধস্তি হয়। রান্নাঘরের ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় তপনবাবুকে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে ছাদ টপকে পালিয়ে যায় প্রদীপ। আর শিবানীর চিৎকারে বাড়িতে এসে জড়ো হয় প্রতিবেশীরা। গতকাল যখন প্রদীপের কাছে জানতে চাওয়া হয় রান্নাঘর থেকে ছুরি কে এনেছিল বা শিবানী তাকে খুন করার জন্য বলেছিল কি না তখন তার উত্তর, “পতা নেহি।”
এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় শিবানীকে আটক করে পুলিশ। তাকে দুর্গাপুর মহিলা থানায় নিয়ে গিয়ে আড়াই ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শিবানীর পরিবারের অভিযোগ, প্রদীপ ব্ল্যাকমেল করছিল শিবানীকে। মা-বাবাকে খুন করার হুমকি দিত। ২০১৭ সালে নাকি তাঁরা এই বিষয়টি জানিয়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। থানায় জেরার পর শিবানীর সঙ্গে কথা বলেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ACP (ইস্ট) বিমল কুমার মণ্ডল।